‘মার্চ ফর গাজা’: সোহরাওয়ার্দীতে গণজমায়েত বিকালে
প্রকাশিত : ০৮:৩২, ১২ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ০৯:০০, ১২ এপ্রিল ২০২৫

গাজায় চলমান হত্যা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের উদ্যোগে ‘মার্চ ফর গাজা’ প্রতিবাদ কর্মসূচি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পালিত হবে আজ। যদিও শাহবাগ থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ পর্যন্ত এই ‘মার্চ’ হওয়ার কথা ছিল।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ শনিবার (১২ এপ্রিল) বেলা তিনটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণজমায়েত করা হবে। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ অভিমুখে যাত্রা করা হবে না।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, এবি পার্টিসহ বিভিন্ন দল, সংগঠন এবং ইসলামি বক্তাসহ বিভিন্ন পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে মতনির্বিশেষে সবাইকে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই কর্মসূচিতে দল, মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ এক কাতারে এসে ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করবেন। কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল মালেক।
এটি ঢাকার রাস্তায় ফিলিস্তিনের পক্ষে সবচেয়ে বড় জনসমাবেশ হতে যাচ্ছে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন আয়োজক ও সংশ্লিষ্টরা।
প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট, বাংলাদেশ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকে ‘মার্চ ফর গাজা’ নামে একটি ইভেন্ট তৈরি করেছে। আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৭৩ হাজার মানুষ তাতে ‘আগ্রহ’ দেখিয়েছেন এবং ৬ হাজার ৩০০ জন অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন।
শুক্রবার আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে ‘মার্চ ফর গাজায়’ আগতদের জন্য কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়-দুপুর ২টায় ৫টি পয়েন্ট থেকে মার্চ শুরু করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণজমায়েত হবে বিকাল ৩টায়।
মার্চের পথ নির্দেশনায় বলা হয়-১ নম্বর পয়েন্ট বাংলামোটর। সেখান থেকে শাহবাগ হয়ে উদ্যানের রমনা গেট দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। ২ নম্বর কাকরাইল মোড়। সেখান থেকে মৎস্য ভবন হয়ে উদ্যানের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট গেট দিয়ে প্রবেশ করবে। ৩ নম্বর জিরো পয়েন্ট। সেখানে অংশগ্রহণকারীরা দোয়েল চত্বর হয়ে টিএসসি গেট দিয়ে প্রবেশ করবেন। ৪ নম্বর পয়েন্ট বকশীবাজার মোড়। তারা শহিদ মিনার হয়ে টিএসসি গেট দিয়ে প্রবেশ করবেন। ৫ নম্বর নীলক্ষেত মোড়। সেখান থেকে ভিসি চত্বর হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের টিএসসি গেট দিয়ে প্রবেশ করবেন অংশগ্রহণকারীরা।
বিশেষ নির্দেশনায় বলা হয়েছে- এদিন টিএসসি মেট্রো স্টেশন বন্ধ থাকবে। পরীক্ষার্থীদের জন্য সব রাস্তা বিশেষভাবে উন্মুক্ত থাকবে। তাদেরকে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়া এবং যে কোনো প্রয়োজনে স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়।
আগতদের জন্য সাধারণ দিকনির্দেশনায় বলা হয়েছে-অংশগ্রহণকারীরা নিজ দায়িত্বে ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমন পানি, ছাতা, মাস্ক সঙ্গে রাখবেন এবং পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখবেন। যে কোনো পরিস্থিতিতে ধৈর্য ও শৃঙ্খলা বজায় রাখবেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন। রাজনৈতিক প্রতীকবিহীন, সৃজনশীল ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। শুধু বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকা বহনের মাধ্যমে সংহতি প্রকাশ করতে অনুরোধ জানানো হয়।
এদিকে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম সব রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সর্বস্তরের মানুষ এক কাতারে এসে ফিলিস্তিনি জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করবেন। সমাবেশকে ঘিরে আয়োজক সংগঠনের ফেসবুক পেজে আলেম, সেলিব্রেটি ও বিশিষ্টজনদের সমর্থনমূলক ভিডিও বার্তা প্রকাশ করা হচ্ছে।
সেখানে দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয় দলের ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাহিদ রানা, তাইজুল ইসলাম, ইসলামি বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ, বুয়েটের প্রভাষক ও জনপ্রিয় ইউটিউবার এনায়েত চৌধুরী, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মোক্তার আহমেদ, ডা. জাহাঙ্গীর কবির, ইসলামি বক্তা আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ, ঝালকাঠি নেছারাবাদ দরবার শরিফের পীর ছাহেব আল্লামা খলিলুর রহমান নেছারাবাদী, উপস্থাপক আরজে কিবরিয়া, উদ্যোক্তা মাহমুদুল হাসান সোহাগ, অভিনেতা তামিম মৃধা ও টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক প্রমুখের ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে।
রাজনীতিকদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান (মঞ্জু), খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান, আপ বাংলাদেশের প্রধান উদ্যোক্তা আলী আহসান জুনায়েদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ প্রমুখের ভিডিও বার্তা ওই পেজে পোস্ট করা হয়েছে।
এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ তার ফেসবুক পেজে নিজেরসহ ১৪ জনের ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, আগামী শনিবার ফিলিস্তিনের জন্য সবচেয়ে বড় মার্চ হবে ঢাকার রাজপথে। স্লোগানে-মিছিলে উত্তাল হয়ে উঠবে শাহবাগ থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ।
এদিকে, শায়খ আহমাদুল্লাহ, মিজানুর রহমান আজহারী ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তাদের নিজ নিজ ফেসবুক পেজেও এই কর্মসূচির প্রচারণা চালিয়েছেন। আজহারী এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ১২ এপ্রিল শাহবাগ থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে গিয়ে এই মার্চটি শেষ হবে।
ফজলুল করীম মারুফ বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজনের মঞ্চ থেকে ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে বাংলা, ইংরেজি ও আরবি ভাষায় একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে। এরপর ইসরায়েলি স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়কে বর্জন করা নিয়ে শপথবাক্য পাঠ করা হবে।
পরে দোয়া ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে আয়োজনটি শেষ হবে।
এএইচ
আরও পড়ুন